ভ্রমণের সাথে এডভেঞ্চারের যোগসূত্র আছে কি নাই এইটা নিয়া দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু "নিরুদ্বিগ্ন প্রশান্ত মনে প্রকৃতি-দর্শন" এর সাথে শুরুর এডভেঞ্চারের মসলা যোগে সিলেট ট্যুর খানা ষোল আনাই স্বাদু হইয়াছে :-D
অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে বিকেল প্রায় শেষ হয় হয়। জিনিস-পত্র গোছ-গাছ এখনো বাকি। সুন্দরবন ট্যুরের ঠিক আগে বি.ডি.আর. এর গোলাগুলির দিন নিউ মার্কেট থেকে কেনা ব্যাগটা আছে বলে রক্ষা। প্রস্তুতি বলতে ওই টুকুই। কি কি নিতে হবে ১৫ মিনিট ধরে তার লিস্ট করলাম। তারপর সব বিছানার উপর রাখলাম। তারপর কোন জিনিস ব্যাগের কোন চেইনে রাখব, সেইটা ভাবতে ভাবতে আরো কিছুক্ষণ। আরো ১০ মিনিট লাগাইয়া ব্যাগে জিনিস-পত্র ঢুকাইলাম। সবকিছু ঠিকঠাক। যেই রুমের বাইরে পা রাখতে যামু, অমনি কারেন্ট গেল চইলা! কিছুদিন আগে কেনা সস্তা নকিয়া মোবাইলের টর্চই সম্বল। কাঁধে বিশাল ব্যাগ, এক হাতে মোবাইল নিয়া আরেক হাত দিয়া যেই মূল দরজার তালার একটা ব্যবস্থা করতেছি, অমনি মোবাইলখানা ঠাস করে ফ্লোরে গেল পইড়া! ঘুটঘুটে অন্ধকার। হাতড়াইয়া হাতড়াইয়া তিন টুকরা খুঁইজা পাইলাম - মূল ফ্রেম, ব্যাটারি আর ব্যাক-কাভার। যাক, বাঁচা গেল!
হাতে সময় আছে দু'ঘন্টার কিছু বেশি। কমলাপুর গিয়া খানিকটা পেট-পূজা না করলে পেটের ভিতরে ঘুমাইয়া থাকা অগ্নি-দেবতা জাইগা উইঠা জ্বালাইয়া দাও পুড়াইয়া দাও শ্লোগান তুলতে পারে। ট্রেনের খাবারের মান তো যাচ্ছেতাই। স্টেশনের কাছকাছি ভাল একটা রেস্টুরেন্ট আছে - দারুচিনি রেস্টুরেন্ট। ওইখানেই খাব। বাসে করে কমলাপুর গেলে খাওয়ার সময় পাবো কিনা সন্দেহ আছে। অগত্যা সি.এন.জি. । ৩০ মিনিট ধরে সি.এন.জি. ড্রাইভারদের ভার্চুয়ালি হাত-পা ধইরাও কাজ হইতেছিল না। শেষমেষ এক ড্রাইভার দয়া কইরা যাইতে রাজি হইল - ২০০ টাকায়! মোহাম্মদপুর থেকে কমলাপুর! আমি "শতভাগ হতবাক" হইয়াও উইঠা পড়লাম। কিছু করার নাই।
কমলাপুরের কাছাকাছি আসতেই আমার মোবাইলের টুকরাগুলা মোবাইল প্যান্টের পকেট থেকে বাইর করলাম। জোড়া দিয়া যেই স্টার্ট দিতে যাব, দেখি মোবাইলের কি-প্যাড নাই! হায় হায়! কারো নাম্বার তো আমার মুখস্ত নাই। কেমনে যোগাযোগ করবো এই চিন্তায় আমি অস্থির। রেল স্টেশনের এক প্লাটফর্ম থেকে আরেক প্লাটফর্মে আমি দৌড়াইতেছি। চেঁচাইতেছি একেক জনের নাম ধরে। কিন্তু কেউ শুনতেছে না। কাউরে পাইতেছি না। হঠাৎ দেখি একটা ট্রেন চলতে শুরু করছে। ট্রেনের নাম কি দেখার চেষ্টা করতেছি। ওই তো! ওইতো উপবন এক্সপ্রেস! আমি দৌড়াইতেছি। দৌড়াইতেছি। কিন্তু না... হইল না। আমি উঠতে পারলাম না... এমন দৃশ্য চোখের সামনে ভাইসা উঠল। কমলাপুরে মোবাইল ঠিক করার দোকান-টোকান আছে কি নাই কে জানে! ভাড়া মিটাইয়া তাড়াতাড়ি গিয়ে দাঁড়াইলাম ট্রেন ছাড়ার লিস্ট এর সামনে। যদিও ফয়সল বলছে ট্রেন ছাড়বে ৯ টা ৪০ মিনিটে, লিস্টে দেখলাম ১০ টায়। স্টেশনের বেশ কয়েকটা প্লাটফর্ম। প্রত্যেকটাতে গিয়া ছুটাছুটি করলাম পরিচিত কোন মুখ দেখার আশায়। কেউই এখনো আসে নাই। গার্ডদের জিজ্ঞেস করলাম উপবন এক্সপ্রেসটা কোন প্লাটফর্ম থেকে ছাড়ে। বলল - ঠিক নাই। ৯ টা তো বেজে গেছে। টেনশনে ঘামে গোসল হয়ে গেছে। স্টেশনের সামনের দিকটায় হাঁটাহাঁটি করতেছি। কাউরেই দেখি না। আল্লাহ আল্লাহ করতেছি। একবার স্টেশনের ওই মাথায় যাই, আরেকবার এই মাথায়। ক্যান্টিনগুলাতে গিয়া উঁকি মেরে দেখি পোলাপান কেউ খাইতেছে কিনা। দূর থেকে ৩/৪ জনের জটলা দেখলেই কাছে আগাইয়া গিয়া দেখি আমাদের কেউ কিনা। ডাচ-বাংলা ব্যাঙ্কের এ.টি.এম. বুথের সামনে গিয়া দেখি আমাদের কাউরে পাওয়া যায় কিনা - সিলেট রওনা দেওয়ার আগে টাকা তুলতেই পারে। ধুর! এত কষ্ট করে আসছি। এখন যদি মিস করি! চিন্তা করলাম - ট্রেন মিস করলে কি করা যায়... ক্যান যে একটা ফোনবুক টাইপের জিনিস হাতের কাছে রাখি না! মেজাজ খারাপ হইতেছে! হঠাৎ দেখি - ডাচ-বাংলা ব্যাঙ্কের এ.টি.এম. বুথের সামনে আজম মামা দাঁড়াইয়া আছে আর আমারে ডাকতেছে! আমি তো উত্তেজনায় আর আনন্দে... !!! দৌড়াইয়া গিয়া জড়াইয়া ধরলাম :)
তারপর দু'জন একসাথে খুঁজতে গেলাম মোবাইল ঠিক করার দোকান। ভাগ্য ভাল - পাইয়া গেছি। তারপর রাতের খাবার খাইলাম দারুচিনি রেস্টুরেন্টে। পেট ভরে খাইছি। বিকেলে নাস্তা করি নাই। চরম খিদা পাইছিল।
স্টেশনে ফিরা দেখি অনেকেই চলে আসছে। অভিযাত্রী আর "হইতে চাইছিলাম-হইতে পারি নাই" মডেলদের কিছুক্ষণ ফটোসেশন হইল। তারপর সবাই মিইলা হই-হই করতে করতে স্টেশনের ভিতরে ঢুকলাম।
Monday, June 8, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
6 comments:
man....u r a born writer...
etodin ei protiva koi chhilo???
keep it up....n i'm waiting for ur next episods... :)
জটিল হচ্ছে!
চলুক!
waiting for d next....
ভাল লিখছিস দোস্ত...চালাইয়া যা।
Joss .... I wish if I could join with you .....
Jotil hoise mama... bakita tartari jhere fel :D
Post a Comment