Tuesday, June 9, 2009

সিলেট ট্যুর - পর্ব ৪ : মাধবপুর বিল আর নীলকন্ঠের জঘন্য চা

লাউয়াছড়া বন থেকে আমরা গেলাম মাধবপুর বিল দেখতে। দুপাশে টিলা, পাহাড়ই বলা যায়। মাঝে বিল। বিলের পানি দারুণ স্বচ্ছ আর সেই রকম ঠান্ডা! ঠিক যতটুকু ঠান্ডা হইলে অসম্ভব গরমে গোসল কইরা শান্তি পাওয়া যায়। মাধবপুর বিলে পৌঁছাইতে পৌঁছাইতে আমরা ১০ টা বাজায়া ফেলছি। সূর্যের তেজ ভালই টের পাওয়া যাইতেছিল। আমার দম ততক্ষণে শেষ! আমি বিলের এক পাড়ে ছায়ায় বইসা পড়লাম। কিছু পোলাপান বিলের বাম পাশের টিলা ধইরা উইঠা গেল। শবনম আর মুফতি বিলের ডানপাশের টিলা ধইরা। আজম ভাবল শবনম আর মুফতি এইভাবে নির্জনে ঘুরব? দুর্ঘটনা ঘইটা যাইতে পারে। তাই সে তাদের কিছু দূরে দূরে থাইকা আগাইতে থাকল। এদের মধ্যে কিছু পোলা ভাবল - এই প্রচন্ড গরমে ছোট ছোট পাহাড়ি গাছগুলা পানির অভাবে খুব কষ্ট পাইতেছে। তাই তারা গাছগুলারে পানি খাওয়াইয়া দোজাহানের অশেষ নেকি হাসিল করিল।

ঘন্টাখানেক ধইরা ঘুরাঘুরি কইরা সবাই মাইক্রোতে ফিরল। মাইক্রোতে যার যা কিছু ছিল তাই নিয়া ছুটল বিলের দিকে গোসল করতে। গোসল শেষ কইরা ফিরতে ফিরতে আরো এক ঘন্টা।

এরপর আমরা গেলাম নীলকন্ঠ টি কেবিন এ চা খাইতে। এই জায়গা নাকি বিশেষ ধরনের চা এর জন্য বিখ্যাত। মফস্বলের রেস্টুরেন্টের মতই একটা জায়গা। ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল বিখ্যাত চা এর আবিষ্কারকের ছবি - একটা টেবিলে তার আবিষ্কার করা বিভিন্ন রকম চা সাজানো, আবিষ্কারক খাটের কিনারায় পা নামাইয়া বসা। এই ছবির নিচে তার মোবাইল নাম্বার, আদি নিবাস, বর্তমান নিবাস ইত্যাদি দেওয়া। আরেক দেয়ালে চোখে পড়ল দোকানের লম্বা একটা মেনু পেইন্ট করা। নরমাল চা থেকে শুরু কইরা গ্রিন টিও আছে। আর রঙ/লেয়ার ২ থেকে শুরু কইরা ৭ পর্যন্ত আছে। প্রতিটা লেয়ারে ১০ টাকা করে দাম বাড়ছে। পোলাপান বেশির ভাগ ভাবল খামু যখন লেটেস্ট/বেশিটাই খাই। দু/একজন পাঁচ লেয়ার আর বাকিরা সাত লেয়ারের চা অর্ডার দিল।

চা বানানোর রুম পাশেই। রুমের দরজার পাশেই লিখা - বিনা অনুমতিতে ভেতরে প্রবেশ নিষেধ। শুনা গেল এই লোক নাকি কাউরে চা বানানোর গোপন পদ্ধতি শিখায় না। আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। অপেক্ষা আর শেষ হয় না। প্রায় আধঘন্টা পর চা আসল। আমরা সাত লেয়ারের চা দেইখা যারপরনাই বিমোহিত। বারবার লেয়ার গুনলাম আসলেই লেয়ার কয়টা দেখার জন্য। যাদের হাতে ক্যামেরা ছিল তার বেশ কায়দা কইরা ছবি তুলল। এই চা খাইয়া ভাব নিতে হবে না‍!

চা এ প্রথম চুমুক কে দিছিল খেয়াল নাই। তবে চুমুক দিয়াই যে শব্দ উচ্চারণ করছিল সেটা খেয়াল আছে - জঘন্য! আমরা তো মুখ চাওয়াচাওয়ি করি। কী ব্যাপার? ঘটনা কী? বাকিরা তাড়াতাড়ি চায়ে চুমুক দিল এবং যথারীতি বিভিন্ন কুৎসিত শব্দ উচ্চারণ করল - ওয়াক্‌, শিট্‌ ইত্যাদি। তারপর এই চায়ের গুনগান(!) গাওয়া হইল কিছুক্ষণ। এই একটা চা খাওয়ার জন্য যখন এতদূর আসছি, তখন খাইয়াই যামু আর কোন লেয়ার এ কি স্বাদ আছে দেখি - মনে মনে এই বইলা সবাই খাওয়া শেষ করল। খাওয়া শেষেও কারো কোন মতের পরিবর্তন হইল না।

চা খাওয়া শেষে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হইল - এই চা যে আরেকবার খাওয়ার জন্য আসব সে একটা বিশাল বোকাচোদা !

No comments: