Wednesday, June 17, 2009

সিলেট ট্যুর - পর্ব ৬ : মাধবকুন্ড এবং দৃষ্টিসুখকর জলকেলি

বৃহস্পতিবার রাতে ট্রেনের জার্নিতে অনেকেরই ঠিকমত ঘুম হয় নাই। তারপর শুক্রবার সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় দাপাদাপি কইরা আমরা সবাই খুব ক্লান্ত ছিলাম। অনেকে আবার রাত জাইগা কার্ড খেলছে। রবিবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাধবকুন্ড যাবার কথা থাকলেও ঘুম থেকে উঠতে দু'একজন ছাড়া সবাই দেরি করছে। নাস্তার সময় কয়েকজনের মুখের অবস্থা দেখে মায়া হইতেছিল।

যাই হোক, আমরা শুরু করলাম আমাদের মাধবকুন্ড যাত্রা। যাওয়ার পথে অনেক মজাই হইছিল। সেসব নোট করে রাখি নাই। ভুইলা গেছি। কারো মনে পড়লে কমেন্ট করিস। মাধবকুন্ডে পৌঁছাইয়া মাইক্রো থেকে নামতেই কিছু ক্ষুদে গাইড পিছু নিল। আদনান আমাদের উদ্ধার করল। সে ক্ষুদে গাইডদের হতাশ করে দিয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে আমাদের গাইড হিসাবে আবির্ভূত হইল। গেটে টিকেট কাইটা ঢুইকা পড়লাম। এইখানে একটা মজার ব্যাপার হইল - আমি কিন্তু টিকেট ছাড়াই ঢুকছি :D অবশ্য অনিচ্ছাকৃতভাবে :-S ঘটনা হইল - মুফতি-শবনম আর আজম আমারে টাকা দিছে টিকেট করার জন্য। আমি টিকেট কিনতে গিয়া নিজের কথা গেছি ভুইলা। ৩ টা টিকেট কিনছি। ওদিকে টিকেট ছাড়াই পোলাপান গেটের ভেতর ঢুইকা গেছে। তারা গেটের মামারে বলছে যে টিকেট কিনা আনতে লোক গেছে। আমি ঢুইকা মামারে দিলাম টিকেট - ৩ টা। মামা জিগায় - বাকি ২ জন কে? আমার তখন মনে পড়ল - আমি নিজের টিকেট কিনতেই ভুইলা গেছি। হায় হায়! কাছেই দেখি মুফতি-শবনম। আমি বললাম - আমি আর এই দুইজন। ততক্ষণে মামা অন্য কিছু লোকের টিকেট চেকিং এ ব্যস্ত। আর আমরা হই হই করতে করতে রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করলাম :-)

পুরা পাহাড়ি পথ দিয়া হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে আমরা পৌঁছাইলাম সেই পাহাড়ি ঝর্ণার কাছাকাছি। অন্য রকম পরিবেশ। সবদিক পাহাড়। পথ বানানো হইছে পাহাড় কাইটা। যেদিকেই তাকাই পাহাড় আর সবুজ। প্রথমেই ফটোসেশন হইল। পাহাড়ি ঝর্ণারে ব্যাকগ্রাউন্ডে রাইখা নিজের একখান ফুটো :D যাদের কাছে ক্যামেরা ছিল তারা বেশ কায়দা কইরা বিভিন্ন এঙ্গেল থেইকা আকাশ, পাহাড়ি ঝর্ণা, পাথর এইসবের ফটো তুলল। পোলাপানের মধ্যে বেশ কিছু চিন্তা করল, তারা পাহাড়ি ঝর্ণার চূড়ায় একটা অভিযান চালাইব। অভিযান শেষে তারা যখন চূড়ায় পৌঁছাইল, তখন নিচ থেকে বেশ কায়দা কইরা তাদের ছবি তোলা হইল। সবার আগে মেহেদিরেই দেখছিলাম চূড়ায়। নিচে থাকা পোলাপাইনের নাম ধইরা চিল্লাইতেছিল।

প্রথম পানিতে নামছিল ... কে আবার? পানির সাথে যার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক - সেই তমাল! শুরু থেকেই সে পানিতে নিজেকে ডুবাইয়া রাখল। ক্ষণে এদিক যায়, ক্ষণে ওদিক। আজম নামল। আর নামল এক জুটি - মুফতি আর শবনম। যাই হোক, পাহাড়ি ঝর্ণার ডানদিকে একটা বিশাল পাথর ছিল যেখানে আমরা অনেকেই বসছিলাম। সেইরকম লাগতেছিল তখন। কুয়াশার মত ঝর্ণার পানি আমাদের গায়ে এসে লাগতেছিল। প্রচন্ড গরমের মধ্যে খুব ভাল্লাগতেছিল ।

আমি, ফয়সল আর শান্তনু ছিলাম পোলাপানের ব্যাগের পাহাড়ার দায়িত্বে। ঝর্ণার ঠিক বিপরীত দিকে ছায়া আছে এমন একটা জায়গায় বইসা ছিলাম আর নিজেরা কথা বলতেছিলাম। পরে আমরা কয়েকজন খিদা আর গরমের চোটে তাড়াতাড়ি ব্যাক করছি মাইক্রোতে।

আরো ঘন্টা দুয়েক পর আমরা ফিরতি পথ ধরলাম। লেবু মামার কাহিনী পরের পর্বে :D